অবন্তীকার নীল আকাশ-6

bangla Golpo

পর্বঃ- ৬

এখন আমি ট্রেনে। জানালার পাশে বসে আছি। মনে হচ্ছে আমি থেমে আছি, সবকিছু পেছনে ছুটে চলছে। ঝিকঝিক ঝিকঝিক শব্দ হচ্ছে। আসলে আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, শুধু ছুটে চলে সময়, আমাদেরকে পেছনে ফেলে। আমি চুপচাপ বসে সময়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি, সময়কে একটা চিঠি পাঠাতে হবে, যে চিঠির কখনো উত্তর আসবে না। চিঠির কথা মনে পরতেই সুখীর কথা মনে পরে গেলো। অনেক দিন হয়ে গেছে, ওর সাথে যোগাযোগ নেই। ওর দেয়া যন্ত্রটা একজন পথ শিশুকে দিয়ে দিছি। তার নাকি মোবাইল চালানোর সখ। কারো সখ অপূর্ণ থাকেনা। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর সবার সখেই পুরন করে, সেটা হয়তো কোন মানবজাতির মাধ্যমেই সেটা আজ কিংবা কাল।

খালাতো ভাই নাহিদকে নিয়ে ট্রেনে করে কক্সবাজার যাচ্ছি। খালা জোর গলায় বললো, নীল তুই না গেলে হবেই না। নাহিদ অনেক ভিতু, ওর সেনাবাহিনীর লিখিত পরিক্ষায় তুই না গেলে পরিক্ষা গোল্লা পাবে। তুই ওর সাথে যা, তুই গেলে ও সাহস পাবে। তোর খালুর অফিসে অনেক কাজের চাপ। সে যেতে পারবে না, আর আমি তোর খালুকে একা রেখে কিভাবে যাই বল। তুই যা, তোর তো কোন কাম কাইজ না। তুই গিয়ে একটু ঘুরেও আসলি, আর নাহিদ পরিক্ষাও দিয়ে আসলো।

আমি নাহিদের থেকে একটা পেপার আর কলম নিয়ে সুখীকে চিঠি লিখতে বসলাম।

কী লিখব ভেবে পাচ্ছি না। কোথায় থেকে শুরু করবো তাও ভেবে পাচ্ছি না।

অনেক বার চেষ্টা করেও কোন লাইন শুরু করতে পারলাম না। একটি লাইনেই বারবার লিখলাম :

সুখী তুমি কেমন আছ? সুখী তুমি কেমন আছ?

সমস্ত পাতা জুড়ে একটি মাত্র বাক্য।

আমি কক্সবাজার বিলাসবহুল হোটেলে পায়ের উপর পা রেখে শুয়ে আছি। আর ভাবছি আগের রাজাদের মত রাজকীয় পোষাক আর হাতে এক গ্লাস শরাব থাকলে মন্দ হতনা। এটা ভাবতে ভাবতেই নাহিদ ছুটে এলো।

-নীল ভাই তোমার চিঠি এসেছে।

এই কক্সবাজারে আমাকে কে চিঠি পাঠাবে? এটা ভাবতে ভাবতেই আবার ভাবনায় হারিয়ে গেলাম। আমি রাজা সিরাজুদ্দৌলা আর আমার কাছে তো বার্তা আসতেই পারে। এতো বড় সাম্রাজ্যের মালিক আমি। এটা ভাবতে ভাবতে চিঠির খামটা হাতে নিলাম।

সুখী চিঠি পাঠিয়েছে। আমি যেই চিঠি পাঠিয়েছিলাম, তার উত্তর পাটিয়েছে নিশ্চয়ই। আপাতত চিঠি পড়তে ইচ্ছা করছে না। আরেকটু আগ্রহ বাড়ুক, তারপর চিঠিটা পড়ি।

রাত প্রায় ২টা বাজে। আমি সমুদ্র সৈকতে পার বসে আছি। হূহূ করে বাতাস বইছে। দূরে কয়েকজন কাপল দেখা যাচ্ছে। আর কিছু লোকজন। আমি কোলাহল থেকে দূরে বসে আছি। ভাবছি সুখীর চিঠিটা পড়া যাক রাতে এই অল্প মৃদু আলোতে। সুখী পাঠানো চিঠিটা খুললাম।

খুলে দেখি, সুখী খুব রাগ করে করে লিখেছেঃ-

“তুমি এত পাগল কেন নীলু? এতদিন পর একটা চিঠি লিখলে, তারমধ্যেও পাগলামি । কেন তুমি এমন করো? তুমি কি ভাবো এইসব পাগলামি দেখে আমি তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসব? তোমার জন্য আরও পাগল হবো? কক্ষনো না। আমি তোমাকে আর ভালোবাসবো না নীলু।

কতদিন তোমার সাথে যোগাযোগ নেই। হাজার বার ফোন করেছি তোমার নাম্বারে। কোন একটা বাচ্চা ফোন ধরে বলে সে নাকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জুনিয়র জো-বাইডেন বলছে। আর তুমি নাকি তাকে ফোনটা গিফট করছ। তুমি নাকি চীনের সম্রাট শেন নুং, তোমাদের রাজনৈতিক খাতিরে নাকি তুমি তাকে মোবাইল উপহার দিয়েছ।

এসব কি নীল? তুমি একটুও ভালো হবা না। আর কত কষ্ট দিবা আমাকে? আমাকে এতো কষ্ট দিতে তোমার এতো ভালো লাগে কেন নীলু!

তোমার কাছে আমি হাতজোড় করছি–স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ কর। জানো ঐদিন দেখলাম দুপুরের কড়া রোদে কেমন পাগলের মতো হাঁটছ। বিড়বিড় করে আবার কি সব যেন বলছ। বাবা সাথে ছিল বলে গাড়ি থেকে নামতে পারিনি। জানো নীলু, তোমাকে দেখে আমার কান্না পেয়ে গেল। তোমার কী সমস্যা তুমি আমাকে বলো।

আমি তোমার সব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো।

ইতি

তোমার সুখী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *