অবন্তীকার নীল আকাশ-4

Bangla Golpo

পর্বঃ- ৪

এক সপ্তাহ পরে একদিন সিদ্দিক মিয়া আমার রুমে আসলো। ওর চোখ লাল।

-নীল ভাই, সমাধান কন।

-সমাধান আছে সিদ্দিক মিয়া। সমাধান বের করেছি।

-তারাতাড়ি কন ভাই। আমি খুব বিপদে আছি। এই কয়দিন বোতল বোতল ফেন্সি খাইলাম। তাও রাইতে ঘুম হয় নাই। খালি সেই পরীটা। বুক ধড়ফর করে।

-শোনেন সিদ্দিক ভাই, ঐ মেয়েটা কোন পরী না, ওইটা মানুষ। আপনার সমস্যা হল আপনি মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছেন।

– কি কন ভাই। মাইয়া মানুষ এতো সুন্দর হয় নাকি! আর আমার দিকে কোন মাইয়া তাকাইয়া থাকতে যাইব কেন..?

-মেয়েটা আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে না। মেয়েটা জন্মগত অন্ধ। আপনার ছাদ থেকে প্রতিদিন ঐ মেয়েটার ছাদের দিকে বাতাস বয়। এজন্য মেয়েটা বাতাস অনুভব করে হয়তো ঐ দিকেই মুখ ফিরিয়ে থাকে। মেয়েটা আপনাকে দেখার জন্য তাকায় না।

সিদ্দিক মিয়ার মুখটা মৃত মানুষদের মতো ফ্যাঁকাসে হয়ে গেলো। ভ্রু কুচকে বললো,

-কি কন ভাই। এতো সুন্দর একটা মাইয়া অন্ধ!

– শুধু অন্ধ না, একদম পুরা “কানা”। নাহলে তো আপনার সাথে প্রেম করিয়ে দিতাম। কিন্তু যত সুন্দরীই হোক, একটা কানা মেয়েকে তো আর আপনার মতো নামি দামি মানুষের প্রেমিকা বানান যায় না। হাজার হলেও, এলাকায় আপনার একটা পরিচিতি আছে। পরে মানুষ কি বলবে!

সিদ্দিক মিয়া খোঁচা খোঁচা দাড়ি চুলকে বলল, আপনার কথা ঠিক ভাই।

সিদ্দিক মিয়া দাড়ি চুলকাতে চুলকাতেই চলে গেলো। আমি আবার দিলাম ঘুম।

ঘুমের মধ্যে উলটা পালটা স্বপ্ন দেখছি। এই দেখি ইরাক যুদ্ধ হচ্ছে, আবার দেখি রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ। হুটহাট যুদ্ধের স্থান চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। আমিও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। সবার হাতে রাইফেল, গ্রেনেড আর আমার হাতে সুখীর দেয়া সেই যন্ত্রটা। সেটা নিয়ে যুদ্ধে এসেছি। কিন্তু, এই যন্ত্র নিয়ে কেন আসছি, সেটাই বুঝতে পারতেছি না। কি অদ্ভুত ব্যাপার, আমার পিছনে পিছনে লাল্লুও এসেছে। আমি লাল্লুকে বললাম, তুই এখানে কি করিস? তোরে কিন্তু পুতিন মামা দেখলে বোমা দিয়া উড়াইয়া দিবো। এটা শুনে যেন লাল্লু বিরক্ত হয়ে বললো, আমাকে উড়ালে তোরে কি ছাইড়া দিবো।

লাল্লুর সাথে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ সুখীর দেয়া যন্ত্রটা বেজে উঠলো। আর ফোনের ভিতর বলছে,

-এই নীলু, নীলু, নীলু বলে ফোনের ভিতর থেকে ডাকেই যাচ্ছে। আমি ফিসফিস করে কথা বলছি। যুদ্ধের গোলাবারুদের শব্দে হয়তো সুখী আমার কথা শুনতে পাচ্ছে না।

হঠাৎ চোখ খুলে দেখি সুখী সত্যি সত্যি আমার মাথার পাশে বসে আছে। আর আমাকে এই নীলু, নীলু বলে ডাকছে। আমার চোখ খুলতেই সুখী বলে উঠলো, নীলু তুমি ঠিক আছো তো। এই নীলু।

আমি কথা বলতে চাইলেও মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। ঠোট দুটো শুধু নড়ছে। শরীরে কথা বলার মত শক্তিটুকু নাই। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। মুখের ভিতরে পুরোই তেতো। মনে হচ্ছে কেউ নিমপাতার এক বাটি রশ মুখের ভিতর ডেলে দিয়েছে।

বাম হাত অনেক ভাড়ি হয়ে আছে। তাকিয়ে দেখি আমার হাতে স্যালাইন লাগানো। বুঝতে পারলাম গতকাল রাতে আমার জ্বর এসেছিল। আর সেই জ্বর থেকেই উলটা পালটা স্বপ্ন দেখেছি।

সামনে তাকাতেই দেখি, সামনের চেয়ারে সিদ্দিক মিয়া বসা। তার হাতে একটা হালকা নীল রঙের খাম নিয়ে বসে আছে। আর বসে বসে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। বুঝতে পারলাম সারা রাত মানুষটা আমার পাশেই ছিল। ডক্টরও মনে হয় উনিই ডেকেছেন। আর সুখীকে খবরটাও উনিই দিয়েছেন। ভাবতে ভাবতেই আমি আবার ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

রাতে ঘুমের ঘরেই বেশ কয়েকবার মনে হল কি যেন একটা বাজছে। জোরে জোরে শব্দ আসে। কিন্তু চোখ খুলতে পারছি না।

তারপর দিন সকালে চোখ খুলে দেখি সুখী এখনও আমার পাশে বসে আছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে, ওর ঠোঁটটা বুঝি একটু কেঁপে উঠলো। সুখী বলে উঠল, -“কেমন লাগছে এখন নীলু।”

-ভালো। কখন আসছ তুমি?

-সিদ্দিক মিয়া রাতে ফোন করেছিল তোমার অবস্থা নাকি আরও খারাপ। তারপর, আবার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসছি।

-সিদ্দিক মিয়া কই?

-গতকালকে রাতে আমাকে খবর দিয়েছিল। আমি এসে ওনাকে কোথাও পাইনি। তবে গতকাল রাতে নাকি তোমার বাসার পাশে খুব গোলাগুলি হয়েছে। পুলিশ আর এলাকার সন্ত্রাসীর মধ্যে। শুনলাম একটা গুণ্ডা ক্রসফায়ারে মারা গেছে তোমার বাসার পাশেই।

– গুণ্ডাটার নাম আঙ্গুল কাটা সিদ্দিক?

-আমি জানি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *