“অবন্তীকার নীল আকাশ-2”

অবন্তীকার নীল আকাশ

পর্বঃ- ২
পাঁচ হাজার বছর আগে চীনের সম্রাট ছিলেন শেন নুং। তিনি গরম পানি খেতে পছন্দ করতেন। একদিন বিকেলে সম্রাটের জন্য করা গরম পানি করা হচ্ছিল। কিন্তু, হঠাৎ করে পেয়ালার মধ্যে ভুল করে একটা পাতা এসে পরে। আর সেই পানি সম্রাটকে দেয়া হয়। সম্রাট গরম পানির পেয়ালায় একটা চুমুক দেন।

দেখলেন গরম পানির স্বাদ পাল্টে গেছে। তিনি অবাক হয়ে পাত্রের দিকে তাকালেন এবং আবার চুমুক দিলেন আবারও সে অবাক হয়ে গেলেন। এবং শেন নুং একটা মুচকি হাসি দিলেন। কারণ তার ভাল লাগছে। তিনি ঘটনা জানার জন্য খোঁজ লাগালেন। এবং হুকুম দিলেন তার গরম পানিতে নিয়মিত এই পাতা দিতে। এই হলো চায়ের ইতিহাস।

আমি এই মুহূর্তে সম্রাট শেন নুংয়ের মতোই বসে আছি। পার্থক্য এতটুকুই উনি উনার বিশাল রাজপ্রাসাদে বসে ছিলেন। আর আমি বসে আছি টিএসসির একটা চায়ের দোকানে। আমার সামনে দোকানদার মামা বসে আছেন। উনি সম্রাট শেন নুং মানে আমার জন্য আলগা পাত্তি দিয়ে চা বানাচ্ছেন। চামচ আর কাপের যুগলবন্দিতে অদ্ভুত একটা ছন্দ তৈরি হচ্ছে। আমি ঘোরের ভিতর চলে যাচ্ছি।

মনে মনে ভাবছি আমি পাঁচ হাজার বছর পিছনে চলে গিয়েছি। ভুল বললাম আমি একা যায়নি। সাথে করে চায়ের দোকানদারকেও নিয়ে গেছি। আমার খাদেম তিনি। আমার সামনে বসে বসে সম্রাটের জন্য আলগা পাত্তি দিয়ে চা বানাচ্ছেন।

ভাবতেই অবাক লাগছে শেন নুং তার খাদেমকে বলছেন দুধ চিনি বাড়ায়ে আলগা পাত্তি দিয়ে একটা চা দাও। তারপর চা খেতে খেতে সম্রাজ্ঞীর জন্য অপেক্ষ করছেন। আচ্ছা, উনার সম্রাজ্ঞীর নাম কি হতো। আমি যার জন্য গত এক ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি তার নাম অবন্তীকা ইসলাম সুখী, আমি অবশ্য তাকে সুখী বলেই সম্বোধন করি।

আচ্ছা, সম্রাট শেন নুংয়ের প্রিয়তমার নাম নিশ্চয়ই সুখী হবেনা। ঝুংমুং টাইপ কিছু একটা হবে। ভাবতে ভাবতে হাসি এসে গেলো। ঘোর কাটলো দোকানদার মামার ডাকে। চা নিতে বলছেন। এতো চমৎকার লাগছে। চুমুক দিতে যাবো হঠাৎই পকেটে রাখা ফোন বেজে উঠলো।

অবশ্য এই ফোনটাও সুখীর দেয়া ফোন। আমাকে সময় অসময়ে খুজে পাওয়া যায়না। তাই জোর করে এই যন্ত্রটা আমার পকেটে পুড়ে দিয়ে দিছে। আর কড়া নির্দেশনা দিয়ে দিছে। ঘর থেকে বের হবার সময় অবশ্যই এই যন্ত্রটা নিয়ে বের হবা। আমি অবশ্য মাঝে মাঝেই সাথে করে বের হইনা, ভুলে যাই। আবার ফোনে চার্জ থাকেনা। এ নিয়েও বেশ রাগারাগি করেছিল সুখী।

একবার সুখী আমার মেসের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। আর আমি রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। আমাকে সে ফোনে পাচ্ছিল না। কারন, ফোনে চার্জ না থাকায় ফোন সুইচ অফ ছিল। পরে আমার রুমের দরজা লাথি দিতে দিতে ভেঙ্গেই ফেলে। আর রুমে ডুকেই ফোন আছার মেরে ভেঙ্গে ফেলেছিল। আমি বলেছিলাম, ভেঙ্গে ফেলেছ একেবারে ঠিক কাজটাই করেছ। এমন যন্ত্র মানুষ রাখে নাকি, যে এমনি এমনি বন্ধ হয়ে যায়।

সুখী রাগে চোখ লাল করে বলেছিল- ফোনে চার্জ না থাকলে তো বন্ধ হবেই।
-সেটাই তো। এমন যন্ত্র কেউ রাখে যেটাতে নিয়ম করে চার্জ দেয়া লাগে। চার্জ না দিলেই সে ঘুমিয়ে যায়। কি সব ফাউল যন্ত্র।

সুখী সেদিন আমার পায়ের কাছে বসে কাদতে কাদতে বলেছিল, তুমি কি একটুও বদলাবা না নীলু। আর কত দিন এভাবে চলবা। আমার জন্য কি একটু বদলানো যায়না? অনেক কেদেছিল। এরপর আবার সেদিনেই আমাকে এই ফোন নামক যন্ত্র কিনে দিয়েছিল।

ফোন বেজেই যাচ্ছে। আমি রিসিভ করে বললাম,
-হ্যালো ঝুংমুং।
সুখী বললোঃ- কি বলছো এসব। বললাম ঠিকই বলছি। তুমি এখন চীনের সম্রাজ্ঞী ঝুংমুং। সুখী বিরক্ত হলো। বললো কি আবোল তাবোল বল। গাজাঁ টাজা খেয়েছো নাকি। যাইহোক, কাজের কথা শুনো । আজ আমি আসতে পারবোনা। আমি বললাম কোন সমস্যা নাই। আমি আসছি তোমার কাছে।

সুখী বললো,গাধার মতো কথা বলছো কেন!
বাড়ি ভর্তি আত্মীয়। আর তোমাকে বিগত ৫ বছর ধরে কতশত বার বলছি বাসায় আসতে তখন আসতে পারো নাই। আর আজকে আসবে তুমি? এসে কি করবে শুনি?
বললাম, তোমার বাবা ইয়াং চিয়াংয়ের সাথে আলাপ করবো। রাজ্যের কিছু বিষয় নিয়ে ভারি আলাপ আছে তার সঙ্গে। সুখী হতাশ হয়ে ফোন কেঁটে দিলো। আমার ইতরামি শোনার সময় হয়তো তার আপাতত নেই। আর আমি ভাবছি, অপেক্ষার পর অপেক্ষার জিনিসটা না পাওয়াটা কতটা কষ্টের। আমিও কিছুটা সেই কষ্টটা অনুভব করছি।

চা খেতে খেতে ভাবছি এখন কি করবো..! কোথায় যাওয়া যায়।

One response to ““অবন্তীকার নীল আকাশ-2””

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *